গৌড় মালদা
ঐতিহাসিক স্থাপত্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং মনোরম পরিবেশের জন্য একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
অবস্থান
পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় অবস্থিত, বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায়।
কিভাবে পৌঁছাবেন:
ট্রেন : কলকাতা থেকে মালদা টাউন স্টেশনে ট্রেন।
বাস : কলকাতা ও অন্যান্য শহর থেকে মালদা শহরে বাস।
গাড়ি : কলকাতা থেকে NH34 দিয়ে গাড়িতে ৪ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন:
মালদা শহরে: বিভিন্ন হোটেল ও গেস্ট হাউস।
গৌড় : হেরিটেজ হোটেল ও রিসোর্ট।
ভ্রমণের টিপস:
শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী) ভ্রমণের সেরা সময়।
আরামদায়ক জুতা ও পোশাক পরুন কারণ অনেক হাঁটতে হবে।
প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন কারণ আবহাওয়া গরম হতে পারে।
সূর্য থেকে ত্বক রক্ষা করার জন্য সানস্ক্রীন ব্যবহার করুন।
স্থানীয় রীতিনীতি ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন।
দর কষাকষি করতে ভুলবেন না, বিশেষ করে বাজারে কেনাকাটা করার সময়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
প্রাচীন বাংলার রাজধানী : ৮ম থেকে ১৬শ শতাব্দী পর্যন্ত, গৌড় ছিল পাল, সেন এবং মুসলিম রাজাদের রাজধানী।
সমৃদ্ধ সংস্কৃতি : বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতির মিশ্রণ, স্থাপত্য, শিল্প ও সাহিত্যে প্রতিফলিত।
ব্যবসা ও বাণিজ্যের কেন্দ্র : স্বর্ণ, রূপা, তামা, মসলা ও কাপড়ের ব্যবসার জন্য বিখ্যাত।
আকর্ষণীয় স্থান
দাখিল দরজা (সালামী দরজা)
ইতিহাস:
দাখিল দরজা, যা সালামী দরজা নামেও পরিচিত, গৌড় দুর্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
এটি মালদহ জেলার চৌকা পারা এলাকায় অবস্থিত।
দরজাটি ১৫ শতকে বাংলার সুলতান শামসুদ্দিন মুহাম্মদ শাহের শাসনামলে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।
মনে করা হয় দরজাটি বিদেশী দূত ও সম্মানিত ব্যক্তিদের দ্বারা দুর্গে প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত হত।
অবকাঠামো:
দাখিল দরজা লাল ইট দিয়ে তৈরি একটি ভব্য স্থাপনা।
এটিতে একটি খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার এবং দুটি পাশের টাওয়ার রয়েছে।
টাওয়ারগুলিতে ছোট ছোট জানালা এবং ফাঁক রয়েছে।
প্রবেশদ্বারের উপরে একটি ফারসি শিলালিপি রয়েছে যাতে নির্মাণের তারিখ ও নির্মাতার নাম উল্লেখ রয়েছে।
অবস্থান:
দাখিল দরজা গৌড় দুর্গের পশ্চিম দিকে অবস্থিত।
এটি দুর্গের প্রধান প্রবেশদ্বার ছিল এবং বর্তমানেও পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় আকর্ষণ।
আরও তথ্য:
দাখিল দরজা ভারতীয় पुरातत्व सर्वेक्षण (ASI) দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
দরজাটি সারা বছর খোলা থাকে এবং প্রবেশের জন্য কোন টিকিট প্রয়োজন নেই।
দর্শনার্থীরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দরজাটি পরিদর্শন করতে পারেন।
লাটান মসজিদ
অবস্থান:
পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার গৌড় শহরের তাঁতীপাড়া মসজিদ ও পাঁচখিলান সেতুর মাঝখানে অবস্থিত ঐতিহাসিক লাটান মসজিদ।
ইতিহাস:
মনে করা হয়, পনেরো শতকের শেষভাগ অথবা ষোড়শ শতাব্দীর হোসেনশাহী আমলে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।
স্থাপত্যশৈলী:
সম্পূর্ণ ইট দিয়ে নির্মিত এই মসজিদের নকশা সুলতানী স্থাপত্যের অন অনন্য নিদর্শন।
মসজিদের অভ্যন্তরে প্রতিপার্শ্বে ১০.৩৬ মিটার বর্গাকার নামাজঘর এবং ১০.৩৬ মিটার × ৩.৩৫ মিটার বারান্দা রয়েছে।
নামাজঘরের কিবলা দেয়াল ব্যতীত অন্য তিন দিকেই তিনটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ আছে।
মসজিদের কিবলা দেয়ালে তিনটি মিহরাব কুলুঙ্গি রয়েছে, যা পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশপথের মুখোমুখি।
কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বাইরের দিকে একটি আয়তাকার অভিক্ষিপ্ত ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত এবং চারটি শিরতোলা কলাম দ্বারা আবদ্ধ।
বারান্দায় তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে পূর্বদিকে, উত্তর ও দক্ষিণেও একটি করে প্রবেশপথ আছে।
চারকোণে চারটি গোলাকার শিরতোলা বুরুজ রয়েছে।
বর্গাকার নামাজঘর একটি সুন্দর গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত।
মসজিদের ছাদ, কার্নিস এবং ব্যাটেলমেন্ট সুন্দরভাবে নকশা করা হয়েছে।
গুরুত্ব:
লাটান মসজিদ কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের একটি অনবদ্য নিদর্শন।
এটি বাংলার সুলতানী আমলের স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণকৌশল সম্পর্কে জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা এই মসজিদ পরিদর্শন করতে আসেন।
বারদুয়ারি মসজিদ (বড় সোনা মসজিদ)
ইতিহাস:
বারদুয়ারি মসজিদ, যা বড় সোনা মসজিদ নামেও পরিচিত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের গৌড় শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ।
এটি মসজিদের স্থাপত্যের হোসেন শাহী রীতিতে নির্মিত।
মসজিদটি ১৫২৬ সালে বাংলার সুলতান হোসেন শাহের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল।
এটি ভারতের বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি এবং বাংলার ইসলামী স্থাপত্যের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।
অবকাঠামো:
বারদুয়ারি মসজিদ একটি বর্গাকার আকৃতির স্থাপনা যার প্রতিটি পাশে 175 ফুট (53 মিটার) দৈর্ঘ্য।
এটিতে 81 টি গম্বুজ রয়েছে, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় গম্বুজটি সবচেয়ে বড়।
মসজিদের চারপাশে তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে, প্রতিটিতে চারটি মিনার রয়েছে।
মসজিদের প্রাচীর লাল ইট দিয়ে তৈরি এবং টেরাকোটা টাইলস দিয়ে অলঙ্কৃত।
মসজিদের অভ্যন্তরে একটি বিশাল প্রার্থনা হল রয়েছে যা একসাথে 10,000 জন মুসল্লি ধারণ করতে পারে।
ধর্মীয় গুরুত্ব:
বারদুয়ারি মসজিদ একটি সক্রিয় মসজিদ এবং এটি জুমার নামাজের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
এটি মুসলিম তীর্থযাত্রীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
পর্যটন আকর্ষণ:
বারদুয়ারি মসজিদ গৌড়ের একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।
মসজিদটি সারা বছর খোলা থাকে এবং প্রবেশের জন্য কোন টিকিট প্রয়োজন নেই।
দর্শনার্থীরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মসজিদটি পরিদর্শন করতে পারেন।
ফিরোজ মিনার (গৌড়)
ইতিহাস:
ফিরোজ মিনার, যা চিরাগ মিনার ও পীরাসা মিনার নামেও পরিচিত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের গৌড় শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
এটি একটি পাঁচতলা বিশিষ্ট মিনার যা ইট দিয়ে নির্মিত।
মিনারটি ১৪৮৫ সালে বাংলার সুলতান সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল।
ধারণা করা হয় মিনারটি মসজিদের আযান দেওয়ার জন্য নির্মিত হয়েছিল, তবে এটি একটি বিজয় স্তম্ভ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
স্থাপত্য:
ফিরোজ মিনার 26 মিটার (85 ফুট) উঁচু।
মিনারটির নিচের তিনটি তলা বহুভুজ আকৃতির, তারপরের দুটি তলা বৃত্তাকার।
মিনারটির বাইরের অংশে বিভিন্ন নকশা ও কারুকার্য খোদাই করা রয়েছে।
মিনারের শীর্ষে একটি ছোট্ট ছাউনি রয়েছে।
বর্তমান অবস্থা:
ফিরোজ মিনার বর্তমানে ভারতীয় पुरातत्व सर्वेक्षण (ASI) দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
মিনারটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত, তবে শীর্ষে যাওয়ার অনুমতি নেই।
কুতুব শাহী মসজিদ (সোনা মসজিদ)
ইতিহাস:
কুতুব শাহী মসজিদ, যা সোনা মসজিদ নামেও পরিচিত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পান্ডুয়া শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ।
এটি 1583 সালে নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
মসজিদটি সুফি সাধক নুর কুতুব আলমের সম্মানে তাঁর বংশধর এবং শিষ্য মখদুম শেখ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
মসজিদটি তার স্থাপত্য এবং সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
স্থাপত্য:
কুতুব শাহী মসজিদ একটি আয়তক্ষেত্রাকার ভবন যার দৈর্ঘ্য 25.10 মিটার (82.4 ফুট) এবং প্রস্থ 11.50 মিটার (37.7 ফুট)।
এটিতে একটি প্রধান প্রার্থনা হল রয়েছে যা তিনটি খিলান দ্বারা বিভক্ত।
প্রার্থনা হলের সামনে একটি বারান্দা রয়েছে যা পাঁচটি খিলান দ্বারা সমর্থিত।
মসজিদের চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে।
মসজিদের দেয়াল লাল ইট দিয়ে তৈরি এবং টেরাকোটা টাইলস দিয়ে অলঙ্কৃত।
ধর্মীয় গুরুত্ব:
কুতুব শাহী মসজিদ একটি সক্রিয় মসজিদ এবং এটি জুমার নামাজের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
এটি মুসলিম তীর্থযাত্রীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
পর্যটন আকর্ষণ:
কুতুব শাহী মসজিদ পান্ডুয়ার একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।
মসজিদটি সারা বছর খোলা থাকে এবং প্রবেশের জন্য কোন টিকিট প্রয়োজন নেই।
দর্শনার্থীরা সকাল 9টা থেকে বিকেল 5টা পর্যন্ত মসজিদটি পরিদর্শন করতে পারেন।
বাইশগজি ওয়াল (গৌড়)
ইতিহাস:
বাইশগজি ওয়াল, যা 'চৌত্রিশগজি' ও 'ষাটগজি' নামেও পরিচিত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের গৌড় শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাচীর।
এটি মনে করা হয় যে প্রাচীরটি ১৫ শতকে বাংলার সুলতান শামসুদ্দিন মুহাম্মদ শাহের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল।
প্রাচীরটি গৌড়ের প্রাচীন রাজধানীকে ঘিরে তোলার জন্য নির্মিত হয়েছিল এবং শত্রুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হত।
স্থাপত্য:
বাইশগজি ওয়াল ইট দিয়ে তৈরি একটি বিশাল প্রাচীর।
প্রাচীরটির উচ্চতা প্রায় 15 মিটার (49 ফুট) এবং প্রস্থ প্রায় 9 মিটার (30 ফুট)।
প্রাচীরটিতে 22 টি বুরজ রয়েছে, যা প্রতিটি প্রায় 30 মিটার (98 ফুট) দূরত্বে অবস্থিত।
প্রাচীরের উপরে একটি প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে যা প্রহরীদের পাহারা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হত।
গুরুত্ব:
বাইশগজি ওয়াল গৌড়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা।
এটি বাংলার সুলতানদের শাসনকালের স্থাপত্য দক্ষতার একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।
প্রাচীরটি পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় আকর্ষণ এবং এটি প্রায়শই ঐতিহাসিক নাটক এবং চলচ্চিত্রের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বর্তমান অবস্থা:
বাইশগজি ওয়াল বর্তমানে ভারতীয় पुरातत्व सर्वेक्षण (ASI) দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
প্রাচীরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত, তবে বুরজগুলিতে যাওয়ার অনুমতি নেই।
দর্শনার্থীরা সকাল 9টা থেকে বিকেল 5টা পর্যন্ত প্রাচীরটি পরিদর্শন করতে পারেন।
চিকা মসজিদ (গৌড়)
ইতিহাস:
চিকা মসজিদ, যা ছোট মসজিদ নামেও পরিচিত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের গৌড় শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ।
এটি মনে করা হয় যে মসজিদটি ১৫ শতকে বাংলার সুলতান জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল।
মসজিদটি সম্ভবত শহরের সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য নির্মিত হয়েছিল।
স্থাপত্য:
চিকা মসজিদ একটি ছোট আকৃতির মসজিদ যার দৈর্ঘ্য 18 মিটার (59 ফুট) এবং প্রস্থ 14 মিটার (46 ফুট)।
এটিতে একটি প্রধান প্রার্থনা হল রয়েছে যা তিনটি খিলান দ্বারা বিভক্ত।
প্রার্থনা হলের সামনে একটি বারান্দা রয়েছে যা তিনটি খিলান দ্বারা সমর্থিত।
মসজিদের পূর্ব দিকে তিনটি মিনার রয়েছে।
মসজিদের দেয়াল লাল ইট দিয়ে তৈরি এবং টেরাকোটা টাইলস দিয়ে অলঙ্কৃত।
ধর্মীয় গুরুত্ব:
চিকা মসজিদ একটি সক্রিয় মসজিদ এবং এটি জুমার নামাজের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
এটি মুসলিম তীর্থযাত্রীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
পর্যটন আকর্ষণ:
চিকা মসজিদ গৌড়ের একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।
মসজিদটি সারা বছর খোলা থাকে এবং প্রবেশের জন্য কোন টিকিট প্রয়োজন নেই।
দর্শনার্থীরা সকাল 9টা থেকে বিকেল 5টা পর্যন্ত মসজিদটি পরিদর্শন করতে পারেন।
পেজটিতে কোনোরকম সংশোধন বা পরিবর্তনের অনুরোধ জানাতে connect@dharona.org আইডি তে ইমেইল করুন ।